ঢাকাMonday , 7 August 2023
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইসলাম
  5. এক্সক্লুসিভ
  6. খেলা
  7. জবস
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ফিচার
  11. বিজ্ঞাপন
  12. বিনোদন
  13. মতামত
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ খবর

ডেঙ্গুর লাগাম টানায় বাধা সমন্বয়হীনতা

admin
August 7, 2023 12:28 am
Link Copied!

দিগন্ত ডেস্ক, বরিশাল :: চলতি বছর কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর; রীতিমতো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম। অনেকে মনে করছেন এটি এখন মহামারী পর্যায়ে চলে গেছে! বছর শুরুর আগেই এ বিষয়ে হুশিয়ারও করা হয়েছিল।

এর পরও পরিস্থিতি কেন দিন দিন এমন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর অন্যতম কারণ সমন্বয়হীনতা। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় লাগাম টানা যাচ্ছে না ডেঙ্গুর।

তারা বলছেন- স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সমন্বিত উদ্যোগের বড় ঘাটতি রয়েছে। পদে পদে সমন্বয়হীনতা ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতটা নাজুক করে তুলছে। এ থেকে উত্তরণে কার্যক্রমে সমন্বয় ও পরিকল্পিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।

সরকারি হিসাবে গত শনিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে; গতকাল রবিবার দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে। এর আগে কোনো বছর ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে। এ ছাড়া গতকাল রবিবার পর্যন্ত সরকারের হিসাবে সারাদেশে চলতি বছর ৬৬ হাজার ৭৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। আরও উৎকণ্ঠার বিষয় এই যে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সরকার যে তথ্য দিচ্ছে, তা ১২ ভাগের ১ ভাগ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বহুগুণ বেশি।

দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০০০ সালে। শুরু থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাক মৌসুম জরিপ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছিল তখন। কিন্তু ২৩ বছর পরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজছে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যান্য সংস্থা।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতি অর্থবছরেই আলাদা বরাদ্দ রাখে সিটি করপোরেশন। সেই বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ও হয়। চলমান অর্থবছরেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা মারতে ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।

অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি বরাদ্দ রেখেছে ৪৭ কোটি টাকা। মশা মারতে গত ২৩ বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় হয়েছে। তাতেও নিয়ন্ত্রণ হয়নি। উল্টো এখন রাজধানী ছাড়িয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিশ মশা।

সরকারের হিসাবে, গতকাল রবিবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩১৩ জন। এর মধ্যে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গত মাসে। চলতি আগস্টের ছয় দিনে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণহীন, তা ওঠে এসেছে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের বক্তব্যেও। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমদানিকৃত নতুন কিটনাশক বিটিআই উদ্বোধনের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু করার বাকি আছে কিনা? ডেঙ্গু কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না? এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া দরকার।

প্রাণঘাতী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন গত ২৩ বছর ধরে একই কাজ করছে। ডেঙ্গুর মৌসুমে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এবং নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাক মৌসুমে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় সেই প্রতিবেদন নিয়ে এডিসের উৎস ধ্বংস করার কার্যক্রম খুব একটা দেখা যায় না।

মশা যখন কামড়ানোর জন্য নিজেকে তৈরি করে তখনই মাঠে নামে সিটি করপোরেশন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসার এটিও বড় একটি কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে ‘পরিবেশ ও সামাজিক অভিঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ডেঙ্গুর প্রসার’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায়ও উঠে এসেছে সমন্বয়হীনতার কথাগুলো।

সেখানে বলা হয়েছে- ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সরকারি পর্যায়ে কোনো গবেষণা হয়নি। চিকিৎসাব্যবস্থাও শহরের সব মেডিক্যাল কলেজকেন্দ্রিক। দেশজুড়ে কোনো কার্যক্রম নেই।

আলোচনাসভায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারী পর্যায়ে চলে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে কখনো রাজনৈতিক কারণ ছাড়া জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুবিষয়ক আলোচনা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সারাদেশকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে সমন্বিত কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সরকার যে তথ্য দিচ্ছে, তা ১২ ভাগের ১ ভাগ। সরকারের হিসাব থেকে রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। পাশের দেশ ভারতের কলকাতা যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার একটি পদক্ষেপও আমরা নিইনি।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এবং মশা মারার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর। ডেঙ্গু বলতে শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশন না। এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশে সমন্বিতভাবে মশার ওষুধ ছিটানো, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সমন্বিত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ডেঙ্গু প্রতিরোধের কাজ চলছে গতানুগতিকভাবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু শনাক্তের পর থেকেই বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তারা বিভিন্ন কমিটি করছে। কাউন্সিলরদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়রদ্বয়। মশককর্মী ও মশক সুপারভাইজারদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তারপরও কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন কাজে অবহেলা করছেন মশককর্মী ও সুপারভাইজাররা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি করপোরেশন যদি যথাযথভাবে কাজ করত তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলেছে, সিটি করপোরেশন সময়ের কাজ সময়ে করতে পারছে না বলেই প্রতিবছর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যেসব নির্দেশনা বা সুপারিশ করা হয় সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেসব সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ দেওয়া হয় সেগুলো মাঠপর্যায়ে যাতে বাস্তবায়ন হয়, সেটার জন্য আমরা চেষ্টা করি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা নিজেরাই মাঠে গিয়ে কাজ করছি। তা ছাড়া আমাদের টিম প্রতিদিনই মাঠে থাকছে এবং কাজ করছে।

এত কিছু করার পরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো চেষ্টা করছি, মাঠপর্যায়েও যাচ্ছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না; এটা সত্য কথা। তবে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আনা কখনোই সম্ভব নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সম্মিলিত প্রয়াস না থাকলে কাজ করা অসম্ভব। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া আগানো সম্বভ না।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেসব নির্দেশনা বা সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা বা মাঠপর্যায়ে সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না এমন কিছু আমরা মনে করছি না।

নির্দেশনা মেনে চলার ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের সঙ্গে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে পালন করছি এবং মাঠপর্যায়ে কাউন্সিলররা সব কাজ পরিদর্শন করছেন। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা দিন-রাত মাঠে আছেন। মশককর্মী, সুপারভাইজার কর্মকর্তা আমরা প্রত্যেকে মাঠে আছি। আমরা সঠিকভাবেই কাজ করছি।

উত্তর সিটি করপোরেশন নতুন কীটনাশক বিটিআই প্রয়োগ শুরু করলেও ভাবনায় নেই দক্ষিণের। এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত বিটিআই ব্যবহার করার কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি। আমাদের আগের কীটনাশক রয়েছে, সেটিই ব্যবহার করছি এবং সেটা খুবই ভালো কাজ করছে। নতুন কোনো কীটনাশকের চিন্তা এই মুহূর্তে করছি না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হিসাব দিচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে যাচ্ছেন সব হাসপাতাল তার তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগকে দিচ্ছে না। ফলে সরকারি হিসাবেও আসছে না। বর্তমানে ঢাকার অধিকাংশ হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা।