সাইদুল ইসলাম, বরিশাল :: ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। চিরাচরিত এই উক্তি সর্বজনীন। ঈদের এমন আনন্দ এখন ঘরে ঘরে হলেও কিছু মানুষের নেই কোনো ফুরসত। মেলে না ছুটি। উৎসব আনন্দে শামিল হতে পারেন না তারা। পেশাগত দায়িত্ব পালনেই তৎপর থাকতে হয়।
পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, পেশাগত কারণে দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে কিছু মানুষ থাকে উৎসব-আনন্দের ঊর্ধ্বে। কর্মস্থলে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনও।
ঈদে ছুটি না পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত র্যাব, পুলিশ, আনসার, বর্ডার গার্ড, কারারক্ষী থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, হাসপাতালের চিকিৎসক, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কর্মীরা।
এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা অনেকেই ঈদের ছুটিতে গ্রামে যেতে পারলেও, অনেকেই ঈদের দিনও থাকবেন কর্মস্থলে। সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দকে আরও দ্বিগুণ করতে নিরাপত্তার জন্য তারা রাত-দিন পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালন করবেন।
নাড়ির টানে অনেকে বাসা কিংবা অফিসে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। তাদের সবকিছু নিরাপদে থাকার জন্য বরিশাল নগরীজুড়ে নিরাপত্তা দিতে প্রহরায় থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। একই সাথে দায়িত্ব পালন করবেন বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের নিরাপত্তা কর্মীরাও।
ঈদেও ছুটি নেই তাদের। মুমূর্ষু ও জরুরি রোগীদের সেবায় ঈদের দিনও হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করবেন চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারা। তেমনি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কোন কোন সাংবাদিক নিজেদের ঈদ আনন্দ বাদ দিয়ে টিভি পর্দায় তুলে ধরেন অন্যদের ঈদ আনন্দ।
কথা হয় র্যাব ৮ এর অপারেশন অফিসার সিনিয়র সহকারী (এডি) রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ৩৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে। সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আনসার বাহিনীতে। নিজের কর্মদক্ষতায় পদোন্নতি পেয়ে যোগ দেন র্যাবের সহকারী পরিচালক পদে। কর্তব্যবোধ বেড়ে যায় তার। তবে এজন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাকে।
ঈদুল-আজহার বা সামাজিক ও পারিবারিক যে কোন অনুষ্ঠানেই পরিবার ও স্বজনদের কাছ থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে হয়েছে তাকে। এবারের ঈদেও তিনি থাকবেন পরিবার থেকে দূরে। তবে এতে একটু মন খারাপ হলেও কোন দুঃখ নেই তার। নিজের আনন্দ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারছেন এতেই সন্তোষ্ট তিনি।
গ্রামের বাড়িতে বাবা, মা ও বোনরা অপেক্ষায় থাকেন। প্রতীক্ষার প্রহর গুনেন। এবার অন্তত বাড়িতে গিয়ে ঈদ উদযাপন করব। কিন্তু তারা কেবলই নিরাশ হোন। তবে সাময়িক কষ্ট হলেও কোন দুঃখবোধ নেই তাদের। তারাও জানে সামান্য এই কষ্টটুকু করছি শুধুমাত্র দেশ ও নিজের পেশাকে ভালবাসি বলেই।
পুলিশ সদস্য গোলাম রাব্বি জানান, আমি ২০১৮ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে এখন পর্যন্ত পরিবারের সাথে আমি ঈদ উপযাপন করতে পারিনি।
আনসার সদস্য সাইদুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে আনসার বাহিনীতে কর্মরত আছি এখন পর্যন্ত পরিবারের সাথে ঈদ উপযাপন করতে পারিনি।
তবে তারাও জানে সামান্য এই কষ্টটুকু করছি শুধুমাত্র দেশ ও নিজের পেশাকে ভালবাসি বলেই।